বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:অভিমান ভেঙে বের হতে না পারায় একে একে তৃণমূলের প্রায় সব দরজাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও তিনি এখন বিজেপি নেতাই। গত বছর ১৪ আগস্ট তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দিলীপ ঘোষের এক বাঁকা কথার জন্য বিজেপির সঙ্গে অসম্ভব দূরত্ব বেড়ে যায় তাঁর। আর সেই সূত্রেই তৃণমূলের সঙ্গে ব্যবধান কমে আসতে শুরু করে বলে শোনা যেতে থাকে। ভাইফোঁটায় কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতেও গিয়েছিলেন সেই তিনি এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া বৈশাখী দেবীকেও অনেকবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে ও বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে। যদিও তাতে শোভন–তৃণমূল দূরত্ব কমানো যায়নি।
তাই রাজ্য বিজেপির কোনও কর্মসূচিতেই দেখা যায়নি শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। তবে আমফান বিপর্যয়ের পর কলকাতার বেহাল অবস্থার কথা তুলে প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান প্রধান প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। তখনই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তৈরি হয়। অন্যদিকে, বেহালায় তৃণমূলের কর্মসূচিতে অভিনেতা সোহমের সক্রিয় হয়ে ওঠাও অন্য ইঙ্গিত দিতে থাকে রাজনৈতিক মহলে। অনেকের ধারণা, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বর্তমান কেন্দ্র বেহালা পূর্বে তৃণমূল প্রার্থী হতে পারেন সোহম। সূত্রের খবর, বিষয়টি প্রায় চূড়ান্তই হয়ে গিয়েছে। ফলে শোভন চট্টোপাধ্যায় যে আর ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হচ্ছেন না, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত হয়ে যায়। ঠিক সেই মুহূর্তেই শোনা গেল শোভনের দিল্লি যাওয়ার সম্ভাবনার কথা।
সূত্রের খবর, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে দিল্লি যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা চাইছেন, আগামী বছরই বিধানসভা নির্বাচন। তাই এখন থেকেই রাজ্যে বিজেপি নেতা ও কর্মীদের সক্রিয় হতে হবে। তাই সক্রিয় হতে হবে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। বুধবার থেকে দিল্লিতে বিজেপির অভ্যন্তরীণ বৈঠক শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকদিন চলবে এই বৈঠক। মঙ্গলবারই দিল্লি চলে গিয়েছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা আর এক নেতা মুকুল রায়। বুধবার দিল্লি যান বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা প্রমুখ। জানা গিয়েছে, শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা ফোন করেছিলেন। বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেনন তাঁকে জানান, বৈঠক সারা সপ্তাহ ধরে দু’দফায় চলবে। বৃহস্পতিবার থেকে আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে যে কোনও দু’দিন যেন বৈঠকে তিনি থাকেন।
বিজেপির একটি সূত্র জানিয়েছে, কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং অরবিন্দ মেননদের নির্দেশ মেনে নিয়েছেন শোভনবাবু। তবে তিনি তাঁদের জানিয়েছেন, তিনি দিল্লি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এখন তাঁর শরীর কিছুটা খারাপ। শ্বাসকষ্টেরও সমস্যা রয়েছে। তাই হয়তো দিল্লিতে নাও যেতে পারেন। যদি সেই কারণে দিল্লি যেতে না পারেন, তবে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বৈঠকে যোগ দিতে পারেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা শোভনবাবুর বক্তব্য মেনে নিয়েছেন। পাশাপাশি রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির হয়ে তাঁকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা। শোভনবাবু এ ব্যাপারে তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, এই ধারাবাহিক বৈঠক প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে দিল্লির বিজেপি নেতারা কলকাতায় আসতে পারছেন না। না হলে কলকাতাতেই ওই বৈঠক হত। রাজ্যের সার্বিক অবস্থা নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বাংলা দখলের ব্যাপারে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কৌশল ও পরিকল্পনার কথা বুঝিয়ে দেওয়া হবে রাজ্য নেতাদের। সেই সঙ্গে সকলের দায়িত্বও ভাগ করে দেওয়া হবে। অনেক সময়ই আবেগের আতিশয্যে অনেক নেতা নানা আপত্তিকর মন্তব্য করে ফেলছেন, যা রাজ্যবাসীদের মানসিকতার সঙ্গে মানানসই নয়। ফলে রাজ্যের সংস্কৃতিবাণ বাঙালির অনেকেই সেইসব কথা শুনে অনেক সময় বিরক্ত হচ্ছেন। সেইসব ব্যাপারেও রাজ্য নেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হবে।